মালদায় প্রচলিত এই গম্ভীরা পার্বনটি চৈত্র মাসের সংক্রান্তিতে শুরু হয় ও চলে বৈশাখ-জৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত। চৈত্র-সংক্রান্তি ও তার পূর্বের চারদিনের এই পূজার মধ্যে রয়েছে :- ১.প্রথম দিন -২৬শে চৈত্র -ঘট ভরা; ২.দ্বিতীয় দিন -২৭শে চৈত্র - ছোট তামাশা; ৩.তৃতীয় দিন -২৮শে চৈত্র - বড় তামাশা; ৪.চতুর্থ দিন -২৯শে চৈত্র - আহারা(বোলাই/বোলবাই)
-: প্রথম দিন -২৬শে চৈত্র - ঘট ভরা :-
গম্ভীরা পার্বনের একদম প্রথম দিনটি শুরু হয় 'ঘট ভরা ' দিয়ে। 'ঘট ভরা' অর্থাৎ ঘট প্রতিষ্ঠা করে গম্ভীরা মন্ডপে শিব পুজো হয়। এই অনুষ্ঠানে কেবল ব্র্রাম্হনরাই অংশগ্রহণ করেন। তবে , এই অনুষ্ঠানটি মূল অনুষ্ঠানের ক'দিন আগে হবে সেটি দলের প্রধান স্থির করেন। তবে সাধারনত তিনদিন আগেই হয়। সন্ধ্যেবেলায় সূর্য অস্ত যাওয়ার পর একজন ব্রাম্হন ঘট ভরেন ,সেই জল ভর্তি ঘট মন্ডপে পূর্ব-পরিকল্পিত স্থানে রাখা হয়। এদিন অন্য আর কোনো অনুষ্ঠান হয় না।
-: দ্বিতীয় দিন - ২৭শে চৈত্র - ছোট তামাশা :-
দ্বিতীয় দিন হয় ছোট তামাশা। ছোট তামাশা শুরু হয় শিব অথবা 'হর -গৌরীর ' বন্দনা দিয়ে। ছোট ছোট ছেলেরা সন্যাসীর বেশ নেয়। এদের বলা হয় 'বাল ভক্ত ' । এই 'বাল ভক্ত 'রা শিবের সামনে দাড়িয়ে 'শিব - বন্দনা ' করে। এবং প্রত্যেকে একপায়ের উপর দাড়িয়ে শিব -মন্ত্রোচ্চারণ করে। এরপর দলগত বা একক নৃত্য পরিবেশন করে। এদিন মুখোশ নৃত্য'ও অনুষ্ঠিত হয়।
-: তৃতীয় দিন - ২৮শে চৈত্র - বড় তামাশা :-
তৃতীয় দিনে অর্থাৎ বড় তামাশার দিনে অতি শুদ্ধ চিত্তে ও শুদ্ধাচারে শিব ভক্তরা কাঁটাভাঙ্গা ও ফুলভাঙ্গা অনুষ্ঠান করে। শিবের ভক্তরা সংযমী উপোসী হয়ে ঐ মন্ডপে রক্ষিত কাঁটা গাছ বুকে ধারণ করে এবং পরে কাঁটার বিছানায় শয়ন করে। তাছাড়া ওই দিনই বিকেলে বাণ ফোঁড়া পর্বে শিবের ভক্তরা লোহার তৈরী ত্রিশূলের সূক্ষভাগ কোমরে বিদ্ধ করে তেল ভেজানো কাপড় জড়িয়ে তাতে আগুন লাগিয়ে দেয়। আগুন যত বেশি জ্বলতে থাকে বাদ্যাদি সহ গম্ভীরার নাচ তত জোর হতে থাকে। এইদিনেই নানা অঞ্চলে এই উপলক্ষ্যে সঙ বেরোয়। এই সঙের মধ্য দিয়েই সামাজিক দুর্নীতির কথা লোক সমাজে প্রচারিত হয়। তাই এর একটা সামাজিক মূল্য রয়েছে। এ দিন সারা রাত ধরে মন্ডপে মুখোশ পরে শিব-দূর্গা ,রামলাক্ষন প্রভৃতির নাচ চলে।
-: চতুর্থ দিন - ২৯শে চৈত্র - আহারা :-
চতুর্থ দিনে গম্ভীরা মন্ডপে শিবপূজা ও নীলপূজার ব্যবস্থা থাকে। রাত্রিতে গম্ভীরা গান বা বোলাই গান হয়। এ গানে মালদহের স্থানীয় ভাষা ও লোকসঙ্গীতের সুর স্পষ্ট ভাবে ফুটে ওঠে ,এই গানের বিষয় বস্তু'কে 'মুদ্দা' বলে। নাটকীয় ভঙ্গীতে সাধারণ সাজে প্রথমে শিববন্দনা ,পরে অভনয় ও পালাগানের শেষে বছরের বিবরণী গাওয়া হয়। নিজস্ব গম্ভীরা ছাড়া 'ছত্রিশী 'বা 'বারওয়ারী ' গম্ভীরা গানেরও প্রচলন রয়েছে।
অবিভক্ত মালদার ভোলাহাট ,শিবগঞ্জ এর পীঠস্থান। কর্তিত মালদা জেলার অহিহো ও পুরাতন মালদা অঞ্চলে আজও এর ঐতিহ্য বর্তমান। তবে লৌকিক দেবতার চেহারা এর মধ্যে থাকায়ে এক এক অঞ্চলে তার পূজার দিন ভিন্ন ভিন্ন ভাবে নির্দিষ্ট। চার -দশক আগেও মালদা জেলার এটি জাতীয় পার্বন হিসেবে মর্যাদা পেত।

No comments:
Post a Comment