গম্ভীরা পূজা কেন্দ্রীক গম্ভীরায় মুখোশ নৃত্য স্থানীয় ভাষায় 'মুখা নাচ' ও গান বর্তমান। তন্মধ্যে গম্ভীরা মুখোশ নৃত্যই প্রাচীনতম। গম্ভীরা মুখোশনৃত্য ;তান্ত্রিক ও ঐন্দ্রজালিক এই নৃত্য গম্ভীরা পূজার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে বিজরিত। আদিতে নিম ও ডুমুর কাঠ দিয়েই এই সব মুখোশ তৈরী হত। ধর্মীয় আচার যুক্ত এই সব মুখোশ নির্মিতি এবং তার সংরক্ষণ পদ্ধতি রয়েছে।
বিভিন্ন ধরনের উপাদানে তৈরী মুখোশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ________________________
১ কাঠের মুখোশ
২ মাটির মুখোশ
৩ সোলার মুখোশ
৪ কাগজের মন্ড -এর মুখোশ
৫ লাউএর খোলার মুখোশ
৬ সুপারি গাছের খোলার মুখোশ
৭ পিচ্বোর্ডের মুখোশ
কাঠের মুখোশ :- মুখোশ নাচ বা মুখা নাচ এ মূলত কাঠের মুখোশ-ই ব্যবহৃত হয়। কাঠের মধ্যে নিম কাঠ'ই ব্যবহৃত হয়। নিম ছাড়া অন্য কাঠের মধ্যে শুধু বেল কাঠের ব্যবহার দেখা যায়। এই দুই ধরনের কাঠ ব্যবহারের নেপথ্যে দুটি কারণ বর্তমান ;যথা :- ১ বিশ্বাস ও সংস্কার অনুসারে নিম ও বেল কাঠ শুদ্ধ ,পবিত্র ও দেবতাদির অর্চনায় সুপ্রচলিত ; এবং
২ নিমকাঠ দীর্ঘকাল টেঁকে। এর আঁশ বেশ শক্ত,তাছাড়া নিমকাঠে কখনও ঘুণ ধরার ভয় থাকে না।
মুখানাচ :- গম্ভীরার মুখানাচ সম্পর্কে শ্রদ্ধেয় হরিদাস পালিত বিস্তৃত আলোচনা করেছেন। গম্ভীরা নাচের খ্যাতির কথা Bengal Anti-Fascist,Writers &Artists' Association এর রিপোর্টে শ্রী হরেন মুখোপাধ্যায় ও উল্লেখ করেছেন। পরবর্তী কালে প্রদ্যোত ঘোষ এ বিষয় আরও আলোকপাত করেছেন।
শ্রদ্ধেয় পালিত মশাই গম্ভীরার আলোচনা প্রসঙ্গে প্রথমেই গম্ভীরার 'নৃত্যমণ্ডপ'ও সাজসজ্জার স্বাতন্ত্র্যের উল্লেখ করেছেন নৃত্য মন্ডপের যে অংশে নৃত্যগীত অনুষ্ঠিত হয় সেখান কোনপ্রকার আসনের ব্যবস্থা থাকে না ____ অতএব সেখানে যারা অনুষ্ঠান করে তাদের ধুলোর উপরেই নাচ -গান করতে হয়। এই নাচগুলো অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল এবং এখনও সেই জনপ্রিয়তা আছে। একই দিনে এবং একই সময়ে বিভিন্ন গম্ভীরায় মুখানাচের অনুষ্ঠান হলে সমৃদ্ধ নৃত্যানুষ্ঠানগুলি সকলেই উপভোগ করতে পারবেন না জেনে এবং কুশলী নর্তকগণের অভাব হয় বলে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে ভিন্ন ভিন্ন তারিখে গম্ভীরা অনুষ্ঠান ও নাচ হয়ে থাকে। মন্ডপে রঙিন কাগজের পদ্মফুল দিয়ে সাজসজ্জার ব্যবস্থা করা হত। গম্ভীরা থেকে গাম্ভিরান্তরে যাওয়ার জন্য অনেকগুলি পাটকাঠির গোছা একত্র করে জ্বালিয়ে আলোর ব্যবস্থা করা হত , এগুলিকে 'উকা ' বলা হয়।
গম্ভীরা অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিনে ছোট তামাশায় 'ভক্তগড়া' এবং 'শিবগড়া' অনুষ্ঠানাদির পর রাত্রিকালে বিবিধ নাচ -গান ও মুখ্যার নাচ হয়। আগে নাচের সময় দর্শকবৃন্দের সন্তুষ্টি বিধানের জন্য পিচকিরি দিয়ে গোলাপজল দেওয়া হত। কোনও কোনও সময় রং মশালেরও ব্যবস্থা থাকত।
গম্ভীরা অনুষ্ঠানে বড় তামাসার বিবরণ দিতে গিয়ে পালিত বাবু বলেছেন যে ,কালিঘাটের নীল পুজোর দিনে গাজনের সময় সন্ন্যাসীরা যেমন শোভাযাত্রা করে থাকেন ,এখানেও অনুরূপ আট থেকে আশি সকলেই শোভাযাত্রায় অংশ নেয়। ভূত -প্রেত -প্রেতিনী ,বাজিকর -বাজিকর-স্ত্রী ,সাঁওতাল ,তুবড়িওয়ালা ইত্যাদি যার যেমন ইচ্ছা সাজসজ্জায় সজ্জিত হয়ে এক গম্ভীরা থেকে আর এক গম্ভীরায় যায়।
এই অনুষ্ঠানটি সাধারনত দিনের বেলায় হয়ে থাকে। বিগত ষাটের দশকেও দেখা গেছে ,রাত্রে হনুমান মুখা নামে বিশেষ আকর্ষনীয় এক নাচ, হনুমানের সমুদ্র পার ও লঙ্কা দহনের ঘটনা যাতে অভিনয় করে দেখানো হত। ওইদিন খুব সকালে সূর্যদয়ের আগে মশাল গম্ভীরা'র জনপ্রিয়তা আজও রয়েছে।



excellent
ReplyDelete