Friday, 20 November 2015

Isolation of Gambhira

লোকনাট্য হিসাবে গম্ভীরাগানের নিজস্ব ,স্বতন্ত্র কিছু শৈলীর পরিচয় পাওয়া যায়। আসরের সাজসজ্জায় সাধারণ উপাদান থাকলেও কিছু কিছু আলাদা ব্যবস্থা দেখা যায়। কারণ এই আঙ্গিকটি সূচনা পর্বে ছিল একান্তই আনুষ্ঠানিক, এই আনুষ্ঠানিকতার স্বার্থে আয়োজন ছিল আলাদা। যেমন ,সাদা পদ্মফুলে অন্য কোনও লোকনাটকের আসর সাজাবার প্রয়াস দেখা যায় না। অথচ গাম্ভীরায়ে এটা ছিল অনিবার্য। তাই টাটকা তাজা সাদা পদ্মফুল না পাওয়া গেলে কাগজে তৈরী পদ্মফুলে আসর সাজানো হত। পদ্মফুল এখানে সৌন্দর্যবিধানের জন্যই সুধু ব্যবহৃত হয় ,তা নয় ;পদ্মফুল এখানে বৌদ্ধমতাদর্শগত অনুশীলনের অন্যতম একটি উপাদান ,সাধন প্রক্রিয়ার একটি প্রতীক। এই পদ্মফুল ,কাগজের পদ্মফুল ছাড়াও আলোকসজ্জার ব্যাপারে কিছু বিশেষ প্রযত্ন লক্ষ করা গেছে। ঝাড়বাতি ,ঝাড়লন্ঠনে মোমবাতির সাহায্যে আলোর রোশনাই সৃষ্টি করা হত। 

                                                                        নতুন বাঁশে ,কাঁচা বাঁশের বাতায় আসরের চৌহদ্দি ঘেরা হয় ;আমপাতা ও নানারকমের লতায় পাতায় সাজানো হত। কচি কাঁঠাল ,আমের কুঁড়ি,কলার পাতা ,কলার মোচা ইত্যাদি আসরসজ্জায় কোথাও কোথাও ব্যবহৃত হয়। এখন থেকে পঞ্চাশ -ষাট বছর আগেও রামকেলি মেলায় বিশেষ একধরনের অলংকৃত বস্ত্র পাওয়া যেত। এই বস্ত্রগুলি আসরের চারদিকে টাঙিয়ে রাখা হত। এই বিশেষত্ব গুলি আমাদের অন্য কোনও লোকনাটকের আসরসজ্জায় দেখা যায় না। 

                                                                                        গম্ভীরা  পালাগান পরিবেশনার আর একটি স্বাতন্ত্র্যের কথা বলবার মত ,___কারণ ,পালাগানে আমরা সাধারনত একটি  গোটা কাহিনী বা গল্প শুনতে বা দেখতে অভ্যস্ত। কিন্তু গম্ভীরায় একটি মাত্র কাহিনী পরিবেশিত হয় না। ধারাবাহিক বা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গ্রথিত একটি মাত্র পালা বা অখ্যায়িকার বদলে ,টুকরো টুকরো পালা বা কাহিনী অংশ দেখা যায়। এখানে একটিমাত্র নির্দিষ্ট কাহিনীর প্রাধান্য থাকে না ঠিকই তবে টুকরো টুকরো অনেক কাহিনীর প্রাধান্য থাকে। অর্থাৎ ,পর্ব -বিভাজনের মালায় গাঁথা অনেক কাহিনীর বা ঘটনার সামগ্রিক উপস্থাপন পাওয়া যায় গম্ভীরাগানে। 
                                                                                               এই পালার প্রাথমিক পর্বে অর্থাৎ বন্দনা পর্বে দেবাদিদেব মহাদেবকে সামনে রেখে ,তাঁকে উদ্দেশ্য করে অভাব -অভিযোগ -সুখ -দুঃখের কথা নিবেদন করতে গিয়ে ভক্তগণ রঙ্গতামাসা করেন। গম্ভীরা গানে মহাদেবকে নানা ,বা নানা হে বলে সম্বোধন করা হয়। এইসব এলাকায় নানা অর্থে দাদু বা ঠাকুরদা বোঝায়। দাদু নাতিতে যা সম্পর্ক ,____তাতে সামাজিক বিধি অনুসারে রঙ্গরসিকতার অবকাশ আছে। দেব -চরিত্রকে নিয়ে এত লঘু -রকমের রঙ্গপ্রিয়তা অন্য লোক -নাট্যে  দুর্লভ। 

          লোক -নাট্য হিসেবে গম্ভীরা অবশ্যই স্কেচধর্মী ও খন্ড খন্ড। পথ -নাটকের পূর্বসূরী বলেও পরিচিত। পোস্টার ড্রামার সঙ্গে সঙ্গতিসম্পন্ন। সহজ সরল হাস্যরসাত্মক ভঙ্গির পাশাপাশি তীব্র তীক্ষ্ণ ব্যঙ্গ ও বিদ্রুপাত্মক আক্রমনের রেওয়াজ দেখা যায়। 

                      গম্ভীরায় খানগান ,কুশানগান ,দোতরা -পালা প্রভৃতি পালার পরিবেশনে স্বাভাবিক ঢিলেঢালা রীতি দেখা যায়। এর পাশাপাশি গম্ভীরা অবশ্যই গতিময়। গম্ভীরা গানের মত  উল্লেখযোগ্য  illusion আর কোথাও লক্ষ করা যায় না। চামর।,পাকা কলার ছড়ি সহ 'চালনবাতি ',ধূপধূনা ,মুখা প্রভৃতি গাম্ভিরাগানের অলংকরণে অনুপস্থিত। শিব-এর সামগ্রিক মিথটি লোকায়ত নাট্যায়নে ____গম্ভীরায় ,বিশেষ আকর্ষক বাতাবরণ তৈরী করে। 






                                                                  












Friday, 13 November 2015

Gambhira Songs & Folk Theatre

জনপ্রিয় লোকনাট্য হিসেবে গম্ভীরা গানের পরিচিতি ও প্রতিষ্ঠা সর্বজনবিদিত। এই লোকআঙ্গিকটি অবশ্যই আনুষ্ঠানিক ;এবং জন্মকাল থেকেই এটি নাট্যধর্মী। গম্ভীরা পার্বন ও অনুষ্ঠানের অনেকগুলি পর্ব বা পর্যায় আছে। ঘটভরা ,ছোট তামাসা ,বড় তামাসা আর বড় তামাসার পরেই বোলবাই বা বোলবাহি নামে পালাধর্মী গান গাইবার রীতি প্রচলিত ছিল।                                                                                                                                                                                                            বোলবাহি শব্দটি আঞ্চলিক 'খোট্টা' উপভাষায় আবাহন ,আহ্বান করা ,বোলানো অর্থে ব্যবহৃত হয়। উদ্দিষ্ট কোনও ব্যক্তিকে ডেকে আনা ,স্বাগত জানানো বা সম্ভাষণ জানানো _____এই শব্দটির প্রধান অর্থ। তবে বামনগোলা -হবিবপুরের কোনও কোনও গ্রামে একে কুচ্ছা ,কির্চা ,কির্ছা বা কেচ্ছাজাতীয় গান বলা হয়। সমাজের যে কোনওব্যাক্তি ___তিনি যত মান্যগন্য বা সম্মানীয় হন না কেন ____যদি কোনও অসামাজিক বা অনৈতিক কাজকর্মে জড়িয়ে পরেন ,তখন তা গম্ভীরার আলোচনার বিষয় হয় ওঠে। নাচগান ,হাসি -তামাসার মধ্যে দিয়ে এই ব্যাপারটিকে তখন জনসাধারণের সামনে পরিবেশন করা হয়। প্রধানত আঞ্চলিক ঘটনার ভিত্তিতেই এই পালাগুলি রচিত ও গীত হত।                                                                                                                                                                                                           বিশ শতকের গোড়ার দিকে বিশিষ্ট চিন্তানায়ক ও সমাজ সংগঠকদের পরিচর্যায় গম্ভীরা পার্বন ও গান নতুন উদ্দীপনা লাভ করে। অধ্যাপক বিনয় সরকার ,আইনজীবী -ঐতিহাসিক রাধেশচন্দ্র শেঠ ,পন্ডিত বিধুশেখর শাস্ত্রী প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তি জাতীয়তাবাদী প্রগতিধর্মী চিন্তাভাবনা নিয়ে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম সংগঠিত করেন। অধ্যাপক বিনয় সরকার ও অন্যান্যদের উদ্যোগে গঠিত 'মালদহ জাতীয় শিক্ষা সমিতির (১৯০৭) কার্যক্রমে এই লোক - আঙ্গিকটির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। 


    স্থানীয় শিল্পীদের মধ্যেও জাতীয় চেতনার বিকাশ ঘটে ,স্বাধীনতার জন্য মুক্তি আন্দোলনের প্রেরণা সঞ্চারিত হয়। এই প্রেক্ষাপটে তাই ,শুধুমাত্র ব্যক্তিকেন্দ্রীক ,অনৈতিক কাজকর্মে লিপ্ত নরনারীর অবৈধ সম্পর্কভিত্তিক আদিরসাত্মক পালা পরিবেশনের মধ্যেই বোলবাহি লোকনাট্যের বিষয়বস্তুর পরিধি সীমিত রইলো না। কিছুসংখ্যক দর্শক -পৃষ্ঠপোষক -পালাকার -গীতিকার -গায়ক -অভিনেতাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নতুন বিষয় ও আঙ্গিকের অনুশীলন শুরু হল। বলবাহী দলগুলির একদেশদর্শী ,ব্যক্তিকেন্দ্রিক অবৈধপ্রনয় নির্ভর পুরনো বিষয়বস্ত্গুলির উপর নতুন চিন্তাভাবনার অভিঘাত লক্ষ করা গেল। নিন্দিত ব্যক্তিদের সাথে গম্ভীরা পালাকারদের বিরোধ দেখা দিতে লাগলো। অনেকটা এই কারণেও কেচ্ছামূলক পালাভিনয়ের ক্ষেত্রে ভাটা দেখা গেল।ক্রমশ ,'বোলবাহী' নামের পালাগানের অবলুপ্তি ঘটতে লাগল এবং বিষয়বস্তুতে ও গঠন প্রকরণে গম্ভীরা গানের ব্যাপ্তি ও অগ্রগতি ঘটতে লাগল।এছাড়া স্বাধীনতা আন্দোলনের উত্তাল ঢেউ বোলবাহি গানের বিষয়বস্তুর গতানুগতিকতায় নতুন স্রোতের জোয়ার আনল। এভাবেই সংকীর্ণ ও সীমিত ধারার বোলবাহী গম্ভীরার বিশাল ব্যাপ্তিতে গেল। 





                এলাকা অনুসারে শিবের আবাহনমূলক আচার -আচরণধর্মী অনুষ্ঠানের ভিন্নতা দেখা যায়। বৈষ্ণবনগর থানার চরিয়ানন্ত্পুর অঞ্চলের দু 'শত বিঘি গোলাপগঞ্জ ,খুবলালটোলা প্রভৃতি গ্রামে বোলবাহি নামে একটি আচার -অনুষ্ঠানের পরিচয় পাওয়া যায়। এই বোলবাহি পর্যায়ের প্রধান প্রধান বিশেষত্বগুলি হল :-

  (১)সম্মিলিত ছড়া ,শ্লোক ও গানের মাধ্যমে শিবদ্দেশে ভক্তিনিবেদন ও বন্দনা জ্ঞাপন করা হয় ;

 (২)কমপক্ষে সাতজন ভক্ত গম্ভীরা মন্ডপ থেকে সংলগ্ন গ্রামে 'ফুলভাঙ্গা 'অনুষ্ঠান পালন করতে যায়। গৃহস্থ বাড়িতে গিয়ে মরসুমী ফল ও ফুল সংগ্রহ করে। এই আচার পালনের মধ্য দিয়ে গম্ভীরার কাজকর্ম সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করা হয় ;

(৩)'সোহারা ' পূজার জন্য কাঁচা বাঁশ ,কলার মোচা ,কঞ্চি ,কলার কাঁদি ,আমের কুঁড়ি ,কচি কাঁঠাল সংগ্রহ করা হয়। সংগ্রহের বিষয়টি এই বোলবাহী পর্যায় ভক্তদের ছড়া গীতি ও শ্লোকাদিতে উল্লিখিত হয় ;


(৪)সংগ্রহ কর্মে নিয়োজিত ভক্তদের একটি করে প্রতীকি পরিচয় পত্র থাকে। যেমন -ফুল ,বেলপাতা ,আমপাতা প্রভৃতি। এই ভক্তদের হাতে খাঁড়া জাতীয় অস্ত্রশস্ত্রাদি থাকে। প্রত্যেকের সঙ্গে একটি করে শঙ্খ থাকে। সংগ্রহকর্মে বাধা প্রাপ্ত হলে তারা পরিচয় প্রতীক দেখায় এবং শঙ্খধ্বণি দেয় ,ফলে গৃহস্থরা সংগ্রহকার্যে আর বাধা দেয় না ;


(৫)ফল -ফুল সংগ্রহ করে গম্ভীরা মন্ডপের নিকটবর্তী কোনও একটি স্থানে এসে শঙ্খ বাজানো হয়। সেই ধ্বণি শুনে ভারপ্রাপ্ত মন্ডল ঢাক -ঢোল কাঁসর বাজিয়ে একটি নতুন বস্ত্রে ভক্তবৃন্দকে আড়াল করে গাম্ভিরায় নিয়ে আসেন ;


(৬)সংগৃহীত ফল -ফুল দেবস্থলে রেখে ভক্তরা নৃত্য করেন ও মাটিতে গড়াগড়ি দেন ;



(৭)সংগ্রহকর্মে নিয়ে যদি কোনো ব্যক্তির পরিচয়পত্র হারিয়ে যায় -সেই ভক্ত ভক্তের মর্যাদা ও অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। 


                                                                              এই আচার আচরণ ও বিধিবিধান পালনে নাটকীয় যাদুক্রিয়ার উপাদান লক্ষনীয়। এই উপাদানগুলিকে অনেকে 'Ritualistic Theater' নামে চিহ্নিত করেছেন। বিধিগুলি বর্তমানে প্রায় প্রচলিত নেই বললেই চলে। 






























































































Thursday, 5 November 2015

Gambhira & Agriculture

কৃষিনির্ভর আমাদের দেশে সাধারণ মানুষের কাছে অন্যতম প্রধান আরাধ্য দেবতা হলেন শিব। শিবকে বলা হয় লৌকিক দেবতা ,লোকপ্রিয় দেবতা এই শিব পূজা বা গম্ভীরা পূজা পার্বনের সময় পালনীয় আচার অনুষ্ঠান এবং বিধিনিয়মের মধ্যে কৃষিমূলক ক্রিয়াকর্মের দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। ঘটস্থাপনা ,'ঘট বসানো '_____প্রভৃতি ক্রিয়াকর্মের কথায় শস্যফলন সংক্রান্ত ভাবনার পরিচয় পাওয়া যায়। 'গম্ভীরা 'য়  বা 'থানে ' নির্দিষ্ট একটি জায়গায় মাটির ঘট বসানো হয়। ঘট বসানোর আগে থানের মাটি খুরে নরম ঝুরঝুরে করা হয়। এই নরম মাটির ওপর ধান,যব,সরিষা,তিসি,ধুতুরা,মুগ,মুসুর,কলাই প্রভৃতি বপন করা হয়। তার ওপর বসানো হয় সেই নতুন ঘট। আচার-অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে অর্থাৎ সাতদিন পর গম্ভীরার মন্ডল বা প্রধান খুঁটিয়ে নিরীক্ষণ করে সবাইকে জানান কোন কোন শস্যবীজ ভালোভাবে অঙ্কুরিত হয়েছে। প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে মনে করা হয় ,ভালোভাবে অঙ্কুরিত শস্য গুলি নতুন বছরে বিশেষভাবে আবাদ করতে হবে ,এগুলির ফলন ভালো হবে। যথার্থভাবে অঙ্কুরিত  হওয়া এবং গম্ভীরা মন্ডপের 'লক্ষণ বিবেচনা ' করে সর্বসমক্ষে ঘোষণা করার বিধিনিয়ম সম্পর্কে সকলের বিশ্বাসবোধ কাজ করে।                                                                                                                                                                                                             প্রসঙ্গত উল্লেখ্য ,গাজোল-হবিবপুর,বামনগোলা থানার বিভিন্ন জায়গায় 'কিসি' একটি অনুষ্ঠান পালিত হয়। গম্ভীরা পার্বনের তৃত্বীয় দিনে,সূর্যদয়ের আগে এই অনুষ্ঠানের কাজ শুরু হয়। সন্দেহ নেই যে 'কিসি ' শব্দটি 'কৃষি ' শব্দ থেকে এসেছে। সমগ্র অনুষ্ঠানটি কৃষিকর্মবিষয়ক।                                                                                                                                                                                                                   খুব ভোরবেলা ভক্তবৃন্দ মিলিত হন গাম্ভিরায়। 'শিবের 'জমি চাষ করবার জন্য ভক্তদের মধ্যে একজন ভক্ত বিশেষ উদ্যোগ নেন এবং মন্ডলের অনুমোদন প্রার্থনা করেন। বিভিন্ন পর্যায়ের কৃষিকর্মগুলি নাচ -গান সংলাপ অঙ্গভঙ্গি ও বাদ্যবাজনা সহ সমবেতভাবে পরিবেশন করা হয়। লাঙ্গল,বলদ ,বলদ দিয়ে চাষ করা মই দেওয়া ,বপন করা ,রোপন করা ,ধান ঘরে তোলা ,জমির মালিকের কাছ থেকে ফসলের ভাগ নেওয়া ____প্রভৃতি অভিনয়ের মাধ্যমে উপস্থিত করা হয়।                                                                                                                                                                                                                এই অনুষ্ঠানের পর ,ওই একই জায়গায় 'ঢেঁকিমঙ্গল ' 'ঢেঁকিমঙ্গলা ' 'ঢেঁকিচুমানো 'বা ঢিকিনাচ অনুষ্ঠিত হয়। 'ঢেঁকিমঙ্গল ' গানে লক্ষীদেবীর আবাহন ,শস্যফলন ,গৃহস্থের আবেদন -নিবেদন এবং কল্যাণ কামনার কথা গানের মাধ্যমে হাজির করা হয়। 'ফুলভাঙ্গা '-'ফলভাঙ্গা ' বিধিপালনের সময় কোনও গৃহস্থ বাড়ির থেকে একটি ঢেঁকি তুলে আনা হয়। কখনও বা ঢেঁকি চুরি করে আনা হয়। বিধিপালন করার জন্য গ্রামান্তরে যাওয়ার সময় প্রধান ভক্তদের কিছু নির্দেশ দেন। 

                                                                                                                                                           এইসব আচার -অনুষ্ঠান ও বিধিবিধানগুলির মধ্য দিয়ে এলাকার সাধারণ কৃষিকাজ ও কাজের সঙ্গে যুক্ত ফলন ব্যবস্থার অনেক তথ্য জানা যায়। উল্লিখিত 'কিসি ' অনুষ্ঠানটি সেই এলাকার কৃষি সম্পর্কের সঙ্গেই জড়িত।                                                                                                                                                                                                                                                                                                                          শক্তিসাধনার সঙ্গেও এই গম্ভীরা পার্বন অনুষ্ঠানাদির একটি ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে। শক্তির প্রতীক হিসাবে দা ,রামদা ,খাঁড়া প্রভৃতি অস্ত্রকেও গাম্ভিরায় পূজা করা হয়। আত্মপীড়নমূলক কিছু অনুষ্ঠান তীক্ষ্ণ লৌহ শলাকা দিয়ে জিভ ,গাল ফোঁড়া ,পিঠ ফোঁড়া ,কাঁটার উপর নাচ হয়।                                                                                                                                                                                                             কালিম্পং এর দশাই মহাপার্বনটি বা শক্তিপূজার সঙ্গে গম্ভীরার মিল পাওয়া যায়। গম্ভীরা পার্বনে ঘট বসবার সময় 'থানে ' যেমন নানারকমের শস্য বীজ বপনের প্রথা পালিত হয় ,দশাই পার্বনের সময়েও ওই একই প্রথা পালন করতে দেখা যায়। এই প্রথার নাম 'জমারা প্রথা '। দশমীর দিন অঙ্কুরিত শস্যবীজের চারাভর্তি সরা মাথায় নিয়ে মেয়েরা পুরুষদের সঙ্গে পথ পরিক্রমায় বের হন। শস্যবীজের এক -একটি ছাড়া হচ্ছে কল্যাণ কামনার বা আশীর্বাদ জ্ঞাপনের পবিত্র উপাদান। বয়স্করা দশমীর দিন ও তার পরের দিন ছোটদের মাথায় ওই শস্যবীজের ছাড়া স্পর্শ করে আশির্বাদ করেন। গম্ভীরা অনুষ্ঠিত হয় চৈত্র -সংক্রান্তিতে ও নববর্ষে আর জমারা হলো শারদীয় পার্বন। উল্লেখ করার মত বিষয় হলো এই যে ,পূর্বে একসময় আমাদের বর্ষারম্ভ হত বিজয়দশমীর দিন থেকে।